অর্থ কষ্টকে সঙ্গী করে খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের মানুষ করছেন ফজিলা বেগম। অথচ স্বামীর নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু এক যুগ ধরে স্বামী আব্দুল হানিফ মোল্লা নিখোঁজ। স্বামীর সন্ধান আর টাকা তোলার উপায় খুঁজে ফিরে আজ হয়রান ফজিলা বেগম। বুকে কষ্ট চেপে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফজিলা বললেন, যেখানেই যাই, সবাই বলে স্বামীর ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ নিয়ে আসো। তাই এখন বুকে পাথর চেপে স্বামীর ডেথ সার্টিফিকেট চাই।’ একথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
যশোর শহরের রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে কোনো রকমে মাথা গুঁজে বাস করছেন ফজিলা। তার স্বামী আব্দুল হানিফ মোল্লা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ গ্রামের মৃত কাদের মোল্লার ছেলে। সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়েক পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব চালাতেন। আর চার ছেলে মেয়ে নিয়ে যশোরে বসবাস করতেন ফজিলা।
সব হারানো সেই দিনটির কথা মনে হলে আজও ভেঙে পড়েন ফজিলা বেগম। দিনটি ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সাল। ঢাকায় ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন আব্দুল হানিফ। এরপর আর তার কোনো সন্ধান মেলেনি। দু’দিন পর ট্যাক্সিক্যাবটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ঢাকার রাজমনি সিনেমা হলের পেছনে পাওয়া যায়। হানিফ মোল্লা নিখোঁজের ঘটনায় লিঙ্কস ক্যাব (বিডি)’র কর্মকর্তা ওবায়দুল হক ২০০৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কাফরুল থানায় একটি জিডি করেন। জিডি নং-১২৬৪।
ফজিলা বেগম বলেন, স্বামী হানিফ মোল্লা নিখোঁজের খবরে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তিনি ঢাকায় ছুটে যান। থানা-পুলিশ বহু জায়গায় ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু স্বামীর সন্ধান মেলেনি। একদিকে, স্বামী নেই, অন্যদিকে ছোট ছোট চারটি সন্তান। উপায় না পেয়ে ছুটেছেন স্বামীর সর্বশেষ কর্মস্থলে। গেছেন খুলনার সোনালী ব্যাংক স্যার ইকবাল সড়ক শাখায়, যেখানে স্বামীর অবসর ভাতা গ্রহণের অ্যাকাউন্ট। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। না পেয়েছেন স্বামীর সন্ধান, না পেরেছেন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে।
অশ্রসিক্ত কণ্ঠে ফজিলা জানালেন, কোনো রকমে দুটি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। একটি মেয়ে লেখাপড়া করছে। অর্থাভাবে ছোট ছেলেটির লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। সে এখন একটি দোকানে কাজ করে। স্বামী নিখোঁজের পর খেয়ে না খেয়ে এই এক যুগ পার হচ্ছে তার। অথচ স্বামীর অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা। প্রতিমাসে পেনসনের টাকা ওই অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। টাকা উত্তোলন আর হচ্ছে না। তিনি নমিনি হলেও কিছুই করতে পারছেন না।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বামীর ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে আসলে তিনি টাকা পাবেন। ‘কিন্তু নিখোঁজ স্বামীর ডেথ সার্টিফিকেট কোথায় পাবো?’ বলে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
বললেন, প্রধানমন্ত্রী তো বহু মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করেন। আমি কোনো টাকা পয়সা সাহায্য চাই না, আমার স্বামীর টাকা যাতে পেতে পারি, সেই ব্যবস্থা করে আমার ছেলে মেয়েদের বাঁচান। সুত্র: জাগোনিউজ২৪